কালপেঁচার ডাক || হিমাদ্রিকিশাের দাশগুপ্ত ( পর্ব ২ )
By Arman Ali
৩
জ্যোৎস্না রাতে পথ চলতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না চিন্ময়বাবু
আগে আগে চলছেন লােকটা, তার দু’পা
পিছনে চিন্ময়বাবু।
পথ চলতে চলতে চিন্ময় লােকটার উদ্দেশে বললেন, ‘পেঁচা হল
মা লক্ষ্মীর বাহন। অথচ, কালপেঁচার ব্যাপারটা নিয়ে এখানকার
মানুষদের মনে যে কুসংস্কার আছে, তা ওই পেঁচা বিক্রেতার কাজে
বুঝলাম।'
চিন্ময়বাবুর কথার জবাবে সুবল বললেন, 'লক্ষ্মীদেবীর মূর্তির
সঙ্গে প্রথম পেচার মুর্তির দেখা মেলে কুষাণ যুগে। সে পেঁচা হল শ্বেতপেঁচা। লোকে বলে লক্ষী পেঁচা। কালাে রং এমনিতেই অশুভর প্রতীক। এই গ্রাম কেন,
দেশে, নানা জায়গায় পেঁচা নিয়ে নানা কুসংস্কার আছে। যেমন উত্তর
ভারতের অনেক জায়গায় লােকের বিশ্বাস, পেঁচা হল মৃত্যুর প্রতীক।
তারা মৃত্যুর বার্তা বহন করে আনে। তা সে যে রঙের পেঁচা ই হােক
কেন! দক্ষিণ ভারতের কিছু মানুষের বিশ্বাস, বাড়ির দাওয়াতে
পেঁচা বসলে শিশুমৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। দেশ-বিদেশের বহু জায়গায়
তাে পেঁচাকে প্রেতাত্মা’ বলেই মনে করা হয়।
সুবল সূত্রধরের কথা শুনে চিন্ময়বাবুর মনে হল, এ লােকটা
সত্যিই শিক্ষিত। নইলে কুষাণ যুগের পেঁচার ব্যাপারটা সে বলতে
পারত না। চিন্ময়বাবু নিজেই জানতেন না ব্যাপারটা। পেঁচা নিয়ে
টুকটাক নানা কথা বলতে বলতে হাঁটতে থাকলেন তাঁরা। সুবল
সুত্রধরের বড় ব্যাগটার ভিতর থেকে মাঝে মাঝে কেমন যেন একটা
খচমচ শব্দ আসছে। তা শুনে চিন্ময়বাবুর কেন জানি মনে হল,
ছােটখাট কোনও জীবন্ত প্রাণী আছে ওর মধ্যে। হয়তাে বা মেলা
থেকে কেনা হাঁস-মুরগি হবে।
হাঁটতে হাঁটতে এক সময় রাস্তার পাশে সেই গাছে ঘেরা পুরানাে
বাড়িটার সামনে পৌঁছে গেলেন তাঁরা। চাঁদের আলােয় বাড়ির
মাথায় পেঁচার মূর্তিটি স্পষ্ট জেগে আছে। বাড়ির সামনের রাস্তায়
এসে থামলেন লােকটা। তারপর চিন্ময়বাবুর উদ্দেশে বললেন,
“আসুন। এই আমার বাসস্থান। বাড়ির মালকিনও খুশি হবেন
আপনাকে দেখলে। কালপেঁচা দেখাব আপনাকে। তার ডাক শােনাব
আপনাকে।' এই বলে লােকটা এগলেন বাড়িটার দিকে।
ঘড়ি দেখলেন চিন্ময়বাবু। রাত সাড়ে আটটা বাজে। এ জায়গা
থেকে স্কুলবাড়ি, পরিতােষের বাসস্থান খুব বেশি দূর নয়। তাঁর
হাতে সময়ও আছে। তবুও এত রাতে হঠাৎ অপরিচিত কোনও
ভদ্রমহিলার বাড়ি যাওয়া ঠিক হবে কি না তা বুঝতে না পেরে থমকে
দাঁড়িয়ে পড়লেন চিন্ময়বাবু। তাঁর পায়ের শব্দ থেমে যাওয়াতে লােকটাকে
লােকটা ঘাড় ফিরিয়ে বললেন, 'আসুন আসুন, সঙ্কোচ করবেন না।
কালপেঁচা
দেখবেন, মালকিনের কত পেঁচার সংগ্রহ আছে। আসুন?
লােকটার ঘাড় ফেরানাের মধ্যে কেমন যেন একটা অদ্ভুত ব্যাপার
আছে বলে মনে হল চিন্ময়বাবুর। কিন্তু সেটা যে কী তিনি তা সেই
মুহূর্তে বুঝে উঠতে পারলেন না! যাই হােক দ্বিধা কাটিয়ে এরপর
তিনি এগলেন সে বাড়ির দিকে।
বড় গাছে ঘেরা বাড়িটার সামনে একফালি ফাঁকা জমি। তারপর
পলেস্তরা খসা থামওলা বারান্দায় উঠতে হয়। বাড়ির ভিতর থেকে
কোনও শব্দ বা আলাে আসছে না। সুবল সূত্রধরের সঙ্গে চিন্ময়বাবু
উঠে এলেন সেই বারান্দাতে। তার একপাশে সার সার বন্ধ ঘর। দু’হাতে
আধাে অন্ধকার বারান্দা দিয়ে চিন্ময়বাবুকে নিয়ে এগতে এগতে
লােকটা বললেন, 'মালকিনের বাবা একসময় এ অঞ্চলের ছােটখাট
জমিদার ছিলেন। প্রচুর ধানজমি ছিল তাঁর। লক্ষ্মী রূপে অষ্টধাতুর
পেঁচা মূর্তি পুজো হতাে সিংহাসনে। তখন লােকজন আর ঠাকুর
চাকরে এ বাড়ি গমগম করত। এ কথা বলতে বলতে চিন্ময়বাবুকে
নিয়ে দরজা টেনে একটা ঘরে প্রবেশ করলেন।
বৈঠকখানা ধরনের বেশ বড় একটা ঘর। চক মেলানাে থাম
মাথার ওপর কড়ি-বরগার ছাদ থেকে একটা ঝুলন্ত আলাে নেমে
এসেছে। কাচের আধারে পলতেওলা তেলের বাতি। তার ঠিক নীচে বসার জন্য কয়েকটা চেয়ার রাখা। দেখেই বােঝা যায় পুরনাে
আমলের জিনিস। এছাড়াও সাবেক কালের একটু নিচু ধরনের গদি
অাঁটা বেশ বড় সিংহাসনের মতাে আসনও রয়েছে দেওয়ালের
একপাশে। তবে এ ঘরের যে জিনিসগুলাে সবথেকে বেশি
চিন্ময়বাবুর দৃষ্টি আকর্ষণ করল তা হল চারপাশের দেওয়ালের গায়ে
বসানাে কাঠের তাক। বুক সমান উচু থেকে প্রায় ছাদ পর্যন্ত
তাকগুলােয় রাখা আছে নানা আকারের, নানা ধরনের পেঁচা।
তারা যেন চেয়ে আছে চিন্ময়বাবুর দিকে। চিন্ময়বাবুর বাড়িতে
যে সংগ্রহ আছে তা এ সংগ্রহের তুলনায় নিতান্তই নগণ্য।
সূত্রধর, চিন্ময়বাবুকে বললেন, 'এসবই নানা জায়গা থেকে আমার
মালকিন সংগ্রহ করে এনেছিলেন।
চিন্ময়বাবু বললেন, 'এ তো দেখছি অবিশ্বাস্য সংগ্রহ। এমন
সংগ্রহ আমি আগে কখনও দেখিনি!
সুবল সূত্রধরের সঙ্গে তিনি এগিয়ে গেলেন দেওয়ালের কাছে।
সুবল তাঁকে বললেন, ‘এ দেওয়ালের সব পেচা এই বাংলার।
আর অন্য পাশের দেওয়ালে অন্য নানা জায়গার পেঁচা।’
লােকটা
প্রথমে যে দেওয়ালের পেঁচাগুলাে দেখাতে লাগলেন, বর্ধমানের
কাঠের পেঁচা তাে আছেই, তার সঙ্গে আছে বীরভূমের সিউড়ির
গালার পেঁচা, বাঁকুড়ার ডােকরা পেঁচা, মুর্শিদাবাদের শােলার পেঁচা,
কৃষ্ণনগরের মাটির, মেদিনীপুরের মােষের সিংয়ের, ঝাড়গ্রামের
রেশমের, অযােধ্যা পাহাড়ের পাথরের নানা ধরনের পেচা।
প্রথম
দেওয়ালটা দেখা শেষ হওয়ার পর যে পাশের দেওয়ালের গায়ে
সিংহাসনটা রাখা আছে সেদিকের দেওয়ালের র্যাকগুলাে দেখতে
লাগলেন চিন্ময়বাবু। সে র্যাকের পেঁচাগুলােও তাকে চিনিয়ে
দিতে লাগল লােকটা। এর কোনওটা নেপালের, কোনওটা বর্মার,
কোনওটা থাইল্যান্ডের, এমনকী সুদূর আফ্রিকা থেকে আনানাে
একটা পেঁচা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন তিনি। একসময় তিনি
লােকটাকে বললেন, ‘অবিশ্বাস্য সংগ্রহ আপনার মালকিনের। কিন্তু
কালপেঁচা কোথায়?
প্রশ্ন শুনে সুবল সুত্রধর নামের লােকটা বললেন, 'আপনি এ
ঘরে একটু অপেক্ষা করুন। আমি সেটা এ ঘরে নিয়ে আসছি।
সেই সিংহাসনটা যেখানে আছে তার কিছুটা তফাতেই দেওয়ালের
গায়ে একটা দরজা আছে। লােকটা তার হাতের ব্যাগটা প্রথমে ঘরের
মেঝেতে নামিয়ে রাখল। তারপর চিন্ময়বাবুকে সে ঘরে একলা
রেখে অন্তর্হিত হলেন সেই দরজা দিয়ে। চিন্ময়বাবু সে ঘরে ঘুরে ঘুরে
দেওয়ালের গায়ে রাখা পেঁচার মূর্তিগুলাে দেখতে লাগলেন।
কিছু সময়ের মধ্যেই সে ঘরে প্রবেশ করলেন সুবল। তিনি
দু’হাতে জাপটে ধরে এনেছেন একটা বেশ বড় পেঁচার মূর্তি। ঘরে
ঢুকে তিনি সাবধানে মূর্তিটাকে সেই সিংহাসনের পাশে নামিয়ে রেখে
বললেন, “এই হল আমার তৈরি কালাে পেঁচা।
চিন্ময়বাবু গিয়ে দাঁড়ালেন সেই মূর্তির সামনে। কাঠের তৈরি কালো
রঙের পেঁচার মূর্তিটার উচ্চতা সাড়ে তিন ফুট হবে। মূর্তিটা প্রস্থের
দিকে যেন একটু বেশি ছড়ানাে, কাত করা পিপের মতাে। পেঁচাটার
ঠোঁট আরও ধারালাে, নখরযুক্ত পা দুটো অত্যন্ত বলিষ্ঠ সাধারণ
পেঁচাদের থেকে। তার কাঠের শরীরে বাটালি দিয়ে যে পালকগুলো
আঁকা হয়েছে তাও যেন কেমন শক্ত রুক্ষ ধরনের। লক্ষ্মীপেঁচার
মতাে কোনও শান্ত-স্নিগ্ধ-লালিমা নেই সে মূর্তিতে, বরং যেন ওই বাকানাে ঠোঁট,
নখগুলাে জীবন্ত হয়ে উঠলে তা যে কোনও মানুষকে ছিড়ে ফেলতে পারে।
একটু ভীতির সঞ্চার হয় ও মূর্তি দেখলে।
তবে মূর্তিটার চোখের জায়গা দুটো শূন্য। মুখােশের যেমন
থাকে তেমনই দুটো ছিদ্র রয়েছে পেচার চোখদুটোতে। চিন্ময়বাবু
বেশ কিছুক্ষণ মূর্তিটার দিকে তাকিয়ে থাকার পর মন্তব্য করলেন,
পেঁচার মূর্তিটা সুন্দর তবে ভয়ঙ্কর।
সুবল সূত্রধর মন্তব্য করলেন, 'এ বাড়িতে এই মূর্তিটা বানানাের
জন্য ই মালকিন আমাকে এনেছিলেন। তবে এ মূর্তি কিন্তু পেচার
নয়, পেচকীর। অর্থাৎ স্ত্রী পেঁচা। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে স্ত্রী
পেচা, পুরুষ পেঁচার থেকে আকারে বড় হয় ?
চিন্ময়বাবু বললেন, হ্যাঁ, তা শুনেছি। তবে এত বড় আর ভয়ঙ্কর
পেঁচার মুর্তি আর আমি দেখিনি!'
সুবল সূত্রধর হেসে বললেন, এরপর আপনি কালপেঁচার ডাকও
শুনতে পাবেন। আর সামান্য একটু সময় অপেক্ষা করুন।
চিন্ময়বাবু জানতে চাইলেন, 'আপনার গৃহকত্রী কোথায় ?
সুবল সূত্রধর হেসে বললেন, তিনিও কিছু সময়ের মধ্যেই এসে
পড়বেন। আপনি চেয়ারে বসে একটু অপেক্ষা করুন।
আবারও ঘড়ি দেখলেন চিন্ময়বাবু। এবার রাত ন'টা বাজে।
তবে তিনি যখন এখানে এসেই পড়েছেন তখন আর একটু সময়
থেকে গৃহকত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আর কালপেঁচার ডাক শুনে
ফিরবেন বলে মনস্থির করলেন। চিন্ময়বাবু ঘরের মাঝে রাখা একটা
চেয়ারে বসলেন। তার কিছুটা তফাতে একটা চেয়ারে বসল সুবল।
দীর্ঘক্ষণ ধরে ঘুরে বেড়ানাের ফলেই সম্ভবত চেয়ারে বসার পর
একটু ক্লান্তিভাব অনুভব করলেন চিন্ময়বাবু। তিনি অপেক্ষা করতে
লাগলেন মালকিনের আগমন আর কালপেঁচার ডাক শুনে ফেরার
সত্যিই মনে হয় ক্লান্তি নেমে এসেছিল। চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে করতে কখন যেন চোখের পাতা বুজে এসেছিল তাঁর। কিন্তু,
হঠাৎই একটা অদ্ভুত তীক্ষ শব্দ শুনলেন তিন।
‘হিস--, টর টর।'
শব্দটা শুনে চমকে উঠে চোখ মেললেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ঘরের
মধ্যেই আবারও যেন সেই শব্দটা হল, ‘হিস টর টর!
চিন্ময়বাবু সােজা হয়ে বসে তাকালেন সুবল সূত্রধরের দিকে।
লােকটা উঠে দাঁড়িয়েছেন। চিন্ময়বাবু তাঁর দিকে তাকাতেই তিনি
হেসে বলল, এই হল কালপেঁচার ডাক। আর ওই যে আমার
গৃহকত্রীও এসে গিয়েছেন।'
এ কথা বলে তিনি আঙুল নির্দেশ করল ঘরের একপাশে।
কালপেঁচার মূর্তির পাশে রাখা সেই সিংহাসনের দিকে।
সেদিকে তাকিয়ে চিন্ময়বাবু দেখলেন এক ভদ্রমহিলা সেই
সিংহাসনে বসে তাঁর দিকে চেয়ে আছেন। তাঁর গায়ের রং ঘাের
কৃষ্ণবর্ণের। থলথলে পৃথুলা শরীর। গােলাকার হাঁড়ির মতাে
মুখমণ্ডলে ড্যাবডেবে চোখ, মাথার কেশদাম যেন ফোলানাে
পালকের মতাে। তবে তিনি স্বর্ণালঙ্কার শােভিত। তাঁর দিকে
তাকিয়েই চিন্ময়বাবুর মনে হল, মহিলার শরীরে কোথায় যেন একটা
অসঙ্গতি আছে। চিন্ময়বাবু চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাতজোড়
করে নমস্কার করলেন তার উদ্দেশে। তা দেখে ভদ্রমহিলা একটু
নড়ে উঠে মাথা নাড়লেন। এবার তাঁর শরীরের অসঙ্গতিটা ধরা
পড়ল চিন্ময়বাবুর চোখে। যে সিংহাসনে তিনি বসে আছেন তা বেশি
উচু নয়। কিন্তু মহিলার পা দুটো মাটি স্পর্শ করছে না। তাঁর হাত
পা বেশ মোটাসােটা হলেও খর্বাকৃতির। অর্থাৎ ভদ্রমহিলা একজন
বামন।
চিন্ময়বাবু তাকে নমস্কার করার পর মহিলা তাঁর উদ্দেশে
ফ্যাসফেসে গলায় প্রশ্ন করলেন, 'আমার পেঁচাদের কেমন
দেখছেন?'
চিন্ময়বাবু জবাব দিলেন, 'খুব ভালাে। এমন সংগ্রহ আমি অন্য
কারও বাড়িতে দেখিনি।'
তিনি যেন খুশি হলেন চিন্ময়বাবুর জবাব শুনে। এরপর তিনি
জিজ্ঞেস করলেন, 'পেঁচাদের দেখতে সুন্দর লাগে আপনার?'
চিন্ময়বাবু উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। ভালাে লাগে। লক্ষ্মীপেঁচা দেখতে
তাে অত্যন্ত সুন্দর। তুলাের বলের মতাে কী ধবধবে সাদা রং।
তার জবাব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভদ্রমহিলা তৃতীয় প্রশ্ন
করলেন, আর কালপেঁচা কেমন লাগে?
চিন্ময়বাবু এবার একটু চুপ করে থেকে জবাব দিলেন, কালপেঁচা
তাে আমি চোখে দেখিনি। তবে আপনার পাশে দাঁড়ানাে এই
কালপেঁচার মূর্তিটা বেশ ভয়ঙ্কর।
কথাটা শুনে যেন হাসলেন গৃহকত্রী। কেমন যেন একটা অদ্ভুত
হিস হিস ফ্যাসফেসে হাসি।
তারপর তিনি সুবল সূত্রধরকে বললেন, ‘খাবার এনেছ খাবার?
উনি আমাদের অতিথি। ওঁকে খাবার দাও। আর আমাদেরও দাও।'
গৃহকত্রীর কথা শুনে চিন্ময়বাবু ভদ্রতা দেখিয়ে বললেন, না, না
আমার কোনও খাবারের দরকার নেই। আপনারা ব্যস্ত হবেন না।'
কিন্তু ভদ্রমহিলার কথা শােনার পর সুবল সূত্রধর এগিয়ে গেলেন
সিংহাসনের কাছে সেখানে তাঁর থলে বা ব্যাগটা রাখা ছিল।
যেটা
তিনি মেলা থেকে সঙ্গে করে এনেছে। লােকটা ব্যাগ থেকে বার
করলেন একটা খাঁচা। তার মধ্যে গাদাগাদি করে আটকানাে আছে
বেশ কিছু সাদা ইঁদুর। অমন ইদুর আজ মেলার একটা দোকানে বিক্রি
হতে দেখেছেন চিন্ময়বাবু। তিনি অনুমান করলেন লােকটা সম্ভবত
সে দোকান থেকেই ইঁদুরগুলাে কিনেছেন। ইঁদুর সমেত খাঁচাটা
দেখেই গৃহকত্রীর চোখ দুটো কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তিনি তাঁর
লােককে বললেন, ‘দাও আমাদের অতিথিকে একটা ইঁদুর দাও।'
চিন্ময়বাবু কথাটা শুনে অবাক হয়ে বললেন, ‘ইদুর নিয়ে আমি
কী করব!
গৃহকত্রী হেসে বললেন, কী করবেন, দেখুন’– এই বলে
তিনি ইশারা করলেন সুবল সূত্রধরকে। তাঁর ইঙ্গিত বুঝতে পেরে
সুবল সূত্রধর খাঁচা থেকে একটা ইদুর বের করে ছুড়ে ফেললেন
ইদুরটাকে। বেচারা ইঁদুরটা অকস্মাৎ মুক্তি পেয়ে ঘরের মেঝেতে
ছােটাছুটি শুরু করল। আর তারপরই চিন্ময়বাবু তাঁর মাথার ওপরে
একটা বাতাসের ঝাপটা অনুভব করলেন। একটা পেচা নেমে এল
মেঝেতে। ক্ষিপ্র গতিতে নখ দিয়ে সে চেপে ধরল তার শিকার সেই
সাদা ইঁদুরটাকে।
Some posts by this author
Delete
Confirm To Delete
All Comments of
Login to add comment0